শীতে ত্বক ও শরীর ভালো রাখতে...
শীতকালে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের ত্বকে এসে পড়ে। এ সময় রুক্ষ,
শুষ্ক হয়ে ত্বক তার উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। আবার পানি কম পানের কারণে
শরীরেও নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেকেই আবার ঠাণ্ডার ভয়ে গোসলই করতে চান না।
কিন্তু ত্বক ভালো রাখতে শীতকালেই আমাদের সঠিক উপায়ে গোসল করা উচিত।
সেইসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পান করা জরুরি। এছাড়া শাকসবজি ও ফলমূলও খেতে হবে
পরিমিত হারে। এতে শরীরের পাশিপাশি ভালো থাকবে ত্বকও।
শীতকালে ত্বক এবং শরীর ভালো রাখতে যা করবেন-
হালকা গরম পানিতে গোসল
শীতকালে গোসলে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার শুধু কষ্টকর নয়, ক্ষতিকরও বটে। কারণ
ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে হঠাৎ করে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। এতে ত্বকে
প্রয়োজনীয় তৈলাক্ত ভাব বজায় থাকে।
সঠিক ক্রিম ব্যবহার
যখন তখন ক্রিম না লাগিয়ে বরং গোসলের পরই ত্বকে ক্রিম লাগান। এতে শরীরে
আর্দ্রতা বজায় থাকবে। এক্ষেত্রে কিন্তু সঠিক ক্রিম বেছে নেওয়ার বিকল্প নেই।
অনেকেই শীতে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করেন, যা কিছু সময় পর ত্বককে পুনরায়
শুষ্ক করে তোলে। এজন্য শীতকালে ওয়াটার বেসড ক্রিমের থেকেও অয়েল বেসড ক্রিম
ব্যবহার ভাল। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। চাইলে সুগন্ধে ভরা বডি
অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- ল্যাভেন্ডার, ক্যামোলিন, জোজোবা ইত্যাদি।
শরীরকে আর্দ্র রাখুন
অনেকে শীতকালে ঘরে হিটার ব্যবহার করেন। কিন্তু হিটারের বদলে চেষ্টা করুন
হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে। কারণ, হিটার ঘরের ভিতরের পরিবেশকে গরম করে
তুললেও বাতাসকে খুব শুষ্ক করে দেয়, যা ত্বকের জন্য একদমই ভাল নয়।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান
অনেকেই শীতকালে খুব কম পরিমাণে পানি পান করেন, যা শরীরের জন্য ভালো নয়। এ
সময় শরীরের ভিতরে তাপমাত্রা সঠিক রাখতে পানি পান খুবই জরুরি। চাইলে শীতকালে
পানি খানিকটা গরম করেও পান করতে পারেন। তবে সঙ্গে লেবুর রস কয়েক ফোঁটা
মিশিয়ে নিলে খুবই উপকার পাবেন।
রাতে ত্বকের যত্ন
আর্দ্রতা ধরে রাখতে রাতেও ত্বকের যত্ন নেওয়া জরুরি। এজন্য ত্বক ভালোভাবে
পরিষ্কার করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যহার করুন।
শুধু মুখ নয়, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে হাত ও পায়ের যত্ন নেওয়া সমান
দরকারী।
নিয়ম করে ত্বক পরিষ্কার
শীতকালে গায়ে সাবান মেখে গোসল করাটা চ্যালেঞ্জ বটে। তারপরও নিয়ম করে ত্বক
পরিষ্কার করাটা অনেক জরুরি। কারণ সারাদিন ক্রিম মেখে থাকলে ধুলো, নোংরা
শরীরে জমা হয়। একইসঙ্গে জমা হতে থাকে মরা কোষও। তাই এসব সমস্যা থেকে
উত্তোরণে নিয়ম করে ত্বক পরিষ্কার করা উচিত।
বিষাক্ত, অ্যালার্জিবর্ধক উপাদান বর্জন
শীতকালে অনেকেরই নানা রকম ত্বকের সমস্যা দেখা যায়। যেমন, শ্বাসকষ্ট বাড়ে,
অ্যালার্জি বৃদ্ধি হয় ইত্যাদি। তাই এই সময় কেমিক্যাল মিশ্রিত ডিটারজেন্ট
ব্যবহার না করাই ভাল। অনেকের উলের থেকেও অ্যালার্জি হয়। তাদের এই সময় মোটা
জাতীয় অন্য ধরণের পোশাক পড়া উচিত। এছাড়া এমন ক্রিম ব্যবহার করা উচিত, যাতে
অ্যালার্জি না বাড়ে।
ভিতরের আর্দ্রতা ধরে রাখুন
শীতকালে শরীরের বাইরে শুধু যত্ন নিলে হবে না, একইসঙ্গে যত্ন নিতে হবে
শরীরের ভেতরেরও। এ সময় বেশি করে এমন খাবার খেতে হবে, যার মধ্যে প্রচুর
পরিমাণে জলীয় উপাদান থাকে। যেমন- সবজি,আপেল, কমলালেবু ইত্যাদি। সবসময় খেয়াল
রাখবেন, শরীরে যেন সঠিক পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
ঢুকতে পারে। তাই নিয়ম করে মাছের তেল, সামুদ্রিক মাছ এবং ফ্ল্যাক্স সিড
খাওয়া দরকার। এতে শরীর এবং ত্বক দুইই ভালো থাকবে।
সঠিক ক্লিঞ্জার ব্যবহার
অনেক সময় ক্লিঞ্জার আমাদের ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। তাই শীতকালের জন্য সঠিক
ক্লিঞ্জার ব্যবহার করা খুবই জরুরি। এমন ধরণের ক্লিঞ্জার ব্যবহার করুন, যাতে
প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা সম্বলিত উপকরণ থাকে। এছাড়া ক্লিঞ্জার দিয়ে মুখ
পরিষ্কার করার পর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে টোনার লাগান। এরপর ভালো কোন ক্রিম
মুখে লাগিয়ে নিন।
ঘরের ফেসমাস্ক ব্যবহার
দোকান থেকে না কিনে শীতে ত্বকের যত্ন নিন ঘরে বানানো ফেসমাস্ক দিয়ে। এই
ফেসমাস্ক বানাতে মধু, অ্যাভকাডো, দই, অলিভ এবং জোজোবা তেল ব্যবহার করুন।
এগুলি একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে মেখে ১০-৩০ মিনিট রেখে দিন। তাতে ত্বক উজ্জল এবং
আর্দ্র থাকবে।
সাবধানতা
শীতকালে ত্বকের যত্নে সাধারণ কিছু সাবধানতা গ্রহণ করতেই হয়। এ সময় রোদে
বেরোনোর আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগানো উচিত। এছাড়া অতিরিক্ত ঠাণ্ডায়
হাতমোজা, মাথায় রুমাল এগুলি ব্যবহার করা জরুরি।

কোন মন্তব্য নেই